ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম : বাংলাদেশের মতো আরো অন্যান্য দেশে চেক সক্রিয় আর্থিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রমাণিত।
চেক কোন শারিরীক স্থানান্তর ছাড়াই অর্থ প্রেরণ এবং গ্রহণের একটা অতি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম করে তোলে। আপনাকে যদি আরও সহজ ভাবে বলা যায়- তাহলে একটা চেক হচ্ছে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো ব্যক্তি সংস্থা বা সরকার বিভিন্ন অর্থের লেনদেন এর জন্য ব্যবহার করতে পারে।
যেকোনো সফল চেক স্থানান্তর করার জন্য ইস্যুকারী কে কোন নির্দিষ্ট ব্যাংক শাখায় একটা সচল সেভিংস না কারেন্ট একাউন্ট থাকতে হবে। আর এই চেক গুলো কে ঝামেলাহীন ফান ট্রান্সফারের পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়।
যদি এই সময়ে স্থানান্তরের ইলেকট্রনিক্স পদ্ধতি গুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তারপরও চেক লেনদেন এখন আমাদের দেশে ব্যবসা গুলোর মধ্যে টাকা লেনদেনের একটি নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত।
চেক টাকা লেনদেনের জনপ্রিয় এবং সেরা মাধ্যমে কিভাবে নিরাপদ ভাবে, চেকের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর করা যায়। সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে যাচ্ছি।
আমাদের আর্টিকেল থেকে আপনি জেনে নিতে পারবেন চেক লেখার নিয়ম, ব্যাংক চেক লেখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। কিভাবে চেক লিখতে হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।
[wp_show_posts id=”3308″]
আপনি যদি এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারনা পেতে চান। তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
কিভাবে একটি ব্যাংক চেক লিখতে হয় (চেক লেখার নিয়ম)
আমাদের বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকার চেক থাকলেও এই প্রত্যেকটি চেক লেখার নিয়ম কিন্তু প্রায় একই রকম। তার জন্য সাধারণভাবে আমরা আলোচনা করে নেব চেক লেখার ক্ষেত্রে করণীয় এবং করণীয় দিকগুলো সম্পর্কে।
[wp_show_posts id=”3303″]
তো আপনি এ বিষয়গুলো জানতে নিচের পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করতে পারেন। প্রথমে আপনাকে চেক লেখার করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে দেবো। যেমন-
করণীয় নিয়ম-
- যেকোনো ব্যাংকের চেক এর শুরুতে আমাদের চেকের বাম পাশে উপরের অংশে দুইটি সমান্তরাল রেখে টেনে দিতে হয়।
- তারেক ভাই আপনি সঠিক তারিখ এবং নামের কলামে যাকে টাকা দেয়া হবে তার নাম এবং কলামে টাকার পরিমাণ একবার সংখ্যায় এবং আরেকবার শব্দ এ লিখতে হবে।
- অ্যামাউন্ট লেখার শেষে /- চিহ্নটি শেষ অংকের লিখে দেবেন।
- চেকের নিচের ডান অংশে স্বাক্ষর এর জায়গায় আপনার ব্যাংক স্বীকৃত স্বাক্ষর করতে হবে।
অকরণীয় নিয়ম-
- চেকের উপরে কোন প্রকার ওভাররাইটিং করা বা লেখার উপর লেখা এবং কাটাকাটি করা যাবে না।
- অ্যামাউন্ট এর সংখ্যা এবং শব্দের মধ্যে বেশি শূন্যস্থান রাখা যাবে না।
- চেক এর কোন খালি রাখা যাবে না।
- চেক ভাজ করা যাবে না। ছেড়া যাবে না এবং স্টেপলার করা যাবে না।
- প্রতিবার পরিষ্কার ভাবে ব্যাংক স্বীকৃত স্বাক্ষর করতে হবে।
- টাকা গ্রহণকারী বা Payee এর নাম বানানে লিখতে হবে।
সেল্ফ বা নিজের নামে চেক কি ?
ড্রয়ার প্রধানত, তার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন স্ব বা সেল্ফ চেক প্রদান করতে পারবেন। এখানে ড্রায়ারের নাম কলামের সেল শব্দটি লিখতে হবে।
একটি সেল্ফ চেক তখন ড্র করা হয়। যথন ড্রয়ারতার ব্যবহার এর জন্য তার নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তলণ করতে চান।
উক্ত চেক টি থেকে শুধু মাত্র একাউনধারী বা ড্রয়ার এর ব্যাংক থেকে টাকা উত্তলণ করা সম্ভব।
এর এই ধরণের চেক অবশ্যই সাবধানে ব্যবহার করা আবশ্যক। তার কারণ এটি এবার হারিয়ে গেলে অন্য ব্যক্তি সহজেই ড্রয়ার এর ব্যাংকে গিয়ে টাকা উত্তলণ করতে পারবেন।
নিজের নামে চেক লেখার নিয়ম
আপনি যদি নিজের ব্যাংক একাউন্টের নিজের চেক লিখতে চান। তাহলে এটা নিজের নামের চেক পূরণ করার আগে অবশ্যই আপনাকে একটি নিয়ম এবং শর্ত গুলো অনুসরণ করতে হবে।
আর এই শর্তগুলো হচ্ছে- আপনার একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যালেন্স থাকতে হবে। যা চেকে উল্লেখিত অংকের পরিমাণ পূরণ করতে সক্ষম হবে। সেল্ফ চেক এ কোন ভাবে ওয়াররাইটিং বা বানান ভুল করা যাবে না। শুধুমাত্র স্বাক্ষর কলামে ড্রয়ারের তার নমুনা স্বাক্ষর দিতে হবে।
এই শর্তাবলী না মেনে চললে, চেকের অবমাননা হতে পারে। এবং চেক বাউন্স কিংবা বাতিল হয়ে যেতে পারে।
আমরা এখানে সেল্ফ বা নিজের নামে তিনটি কলাম এর বিবরণ ব্যাখ্যা করলাম। যার সাহায্যে আপনি কিভাবে, নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে নিজে নিজেই টাকা তুলতে পারবেন।
নিজের নামে চেক লেখার নিয়ম জেনে নিন এখন-
তারিখ বা ডেট
আপনি যেদিন ব্যাংক থেকে চেক ব্যবহার করে টাকা তুলবেন। সেদিন তারিখ এবং ডেট লিখতে হবে। আর বর্তমান সময়ে আমরা যেকোন ব্যাংকের চেক তারিখ দিয়ে ফেললে সেটি ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকে ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করতে পারব।
Pay বা Payee
আপনার নিজের নামে থাকা ব্যাংক চেক থেকে একমাত্র নিজের নামের চেক থেকে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব। উক্ত চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে আপনাকে Payee বা প্রাপক এর কলামে Self লিখতে হবে।
কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই সে ব্যাংক শাখায় আপনার নামে অ্যাকাউন্ট অবশ্যই থাকতে হবে। আর শুধুমাত্র আপনি আপনার চেক থাকে সেল্ফ লেখাটির মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন। তা না হলে, কোন ভাবে টাকা তোলা সম্ভব হবে না।
প্রদেয় অংকের সংখ্যা
এমাউন্টের কলামে আপনাকে আপনার টাকার অংকের পরিমাণ সংখ্যা আকারে লিখে শেষ সংখ্যা পাশে /- টাকা চিহ্নটি বসাতে হবে।
প্রদেয় অংকের শব্দ
টাকার অংকটা সঠিকভাবে শব্দ লিখতে হবে আর শব্দ আকারে লেখা হয়ে গেলে মাত্র বা only শব্দটি যুক্ত করতে হবে।
স্বাক্ষর
আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে চাইলে, আপনি একজন ড্রয়ার হিসেবে অ্যাকাউন্ট খোলার সময়, ব্যাংকে জমা দেওয়ার স্বাক্ষর সেল্ফ চেকে করতে পারবেন।
- ডেবিট কার্ড কি ? ডেবিট কার্ড খোলার নিয়ম [বিস্তারিত এখানে]
- ভিসা কার্ড কি ? ভিসা কার্ড করার নিয়ম [বিস্তারিত এখানে]
ক্রসড বা ক্রস চেক কি ?
ক্রস ব্যাক ক্রসড চেক হচ্ছে সেই সকল চেক। যেখানে দুটি সমান্তরাল রেখা দিয়ে ক্রস করা হয়। উক্ত সমান্তরাল ক্রস দুইটি আপনার সরা চেক জুড়ে বা চেক এর উপরের বাম পাশে ব্যবহার করতে পারবেন।
উক্ত ডাবল লাইন নোটেশনটির মাধ্যমে বোঝায় যে, চেকটি শুধু মাত্র সরাসরি কোন ব্যাংক একাউন্টে জমা করা সম্ভব। সুতরাং উক্ত চেক গুলো অবিলম্বে কোন ব্যাংক বা অন্য কোন ক্রেডিট অর্গানাইজেশন এর দ্বারা ক্যাশ করা সম্ভব না।
ক্রসিং এর মাধ্যমে আপনি সেই ব্যক্তি কে সন্ধান করতে পারবেন। যাকে আপািন টাকা প্রদান করেছেন। আর চেকে ক্রস করা না হলে সেটিকে ওপেন চেক বলা হয়।
ক্রসড চেকের ধরণ
চেক এর ক্রসিং দুই প্রকার হয়। যেমন- জেনারেল এবং স্পেশাল চেক ক্রসিং। তো চলুন এই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
- মাস্টার কার্ড কি ? মাস্টার কার্ড খোলার নিয়ম [এখানে দেখুন]
- ক্রেডিট কার্ড কি ? ক্রেডিট কার্ড খোলার নিয়ম [বিস্তারিত এখানে]
01. জেনারেল বা সাধারণ চেক ক্রসিং
জেনারেল ক্রসড চেক এর মুখে জুড়ে দুইটি সমান্তরাল রেখা অন্তভূক্ত করা হয়। যার উপরে Not negotiable সব দুইটি লেখা থাকে।
এই ধরণের শব্দ গুলো লেখা থাকলে। চেকটি কে একটি ক্রসিং হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নিচে দেওয়া একটি চেক জেনারেল চেক বা সাধারণ চেক ক্রসিং বলা হয়। তার জন্য নিচে দেওয়া তথ্য গুলো অনুসরণ করুন। যেমন-
- যখন চেক এর মুখে জুড়ে দুইটি সমান্তরাল রেখা আকা থাকে।
- যখন কোন চেকে দুইটি সমান্তরাল রেখার মধ্যে and company শব্দ থাকে।
- যখন কোন চেকে দুইটি সমান্তরাল রেখার মধ্যে not negotiable শব্দ লেখা থাকে।
- আর যখন কোন চেক দুইটি সমান্তরাল রেখার মধ্যে A/C বা Payee শব্দ বা সীল ব্যবহার করা হয়।
02. স্পেশাল চেক ক্রসিং
চেক এর দুটি সমান্তরাল রেখার মধ্যে যখন কোন নির্দিষ্ট ব্যাংক এর নাম লেখা থাকে। তখন সেটিকে বিশেষ ভাবে ক্রস করা চেক বা স্পেশাল এবং রেজিস্ট্রিক্টেড চেক ক্রসিং বলা হয়।
এই সকল চেকে লেখা টাকার পরিমাণ শুধু মাত্র ড্রয়ার দ্বারা প্রদেয় ও শুধুমাত্র ক্রসিং এ উল্লেখিত ব্যাংকে তা লেনদেন করা যাবে। তাছাড়া আরো দুইটি ক্রসড চেক আমরা ব্যবহার করি যেমন-
- 01. Not negotiable চেক ক্রসিং:
- 02. অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক ক্রসিং
একাউন্ট payee লেখা চেক গুলোতে টাকা শুধুমাত্র উল্লেখিত ব্যাংক থেকে তোলা যায়্ কিন্তু এক্ষেত্রে প্রাপক উক্ত টাকা নগদ না পেয়ে সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে পাবেন।
- এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম (এখানে দেখুন)
- পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা নেওয়ার নিয়ম (বিস্তারিত)
- মোবাইল ব্যাংকিং কি ? মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা
শেষ কথাঃ
তো বন্ধুরা আজ আমাদের এই পোস্টে আপনাকে জানিয়ে দিলাম।চেক লেখার নিয়ম, ব্যাংক চেক লেখার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। আপনার যদি কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে সেখান থেকে চেক গ্রহণ করে আপনারা টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
আর কিভাবে আপনারা ব্যাংকের চেক লিখবেন। সে বিষয়ে আমরা উপরোক্ত আলোচনার বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছি। তো আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার পর আপনার কাছে কেমন লাগলো অবশ্য একটি কমেন্টের আশায় করছি।
আর বিশেষ করে যারা চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানে না তাদেরকে এই পোস্ট জানাতে, একটি সোশ্যাল মিডিয়ার শেয়ার করে দিবেন।
এছাড়া আপনি যদি আমাদের এই ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের অনলাইন টিপস এন্ড ট্রিক্স পেতে চান ভিজিট করুন ধন্যবাদ।