চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত (চাকরির রিজাইন লেটার বাংলা)

চাকরির রিজাইন লেটার বাংলা : কোন চাকরিতে নতুন জয়েন করা এবং পুরোনো চাকরি ছেড়ে দেওয়া এই দুটি বিষয় হচ্ছে, আমাদের প্রায় সকলের জীবনের একটা অঙ্গ।

প্রায় সকলেই কমবেশি চাকরি পরিবর্তন করে থাকে। আরে চাকরি পরিবর্তন এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে পুরনো চাকরিতে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যাপারটি।

চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত (চাকরির রিজাইন লেটার বাংলা)
চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত (চাকরির রিজাইন লেটার বাংলা)

অব্যাহতি দেওয়ার সময় আমাদের যে অ্যাপ্লিকেশন অফিস কর্তৃপক্ষকে লিখতে হয়। সেটির বিষয়ে আমাদের অনেকের মনে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা কাজ করে।

কিন্তু যাই হোক না কেন আমাদেরকে সবসময় একটু সুন্দর করে লিখে অব্যাহতি পত্র জমা দিতে হয়। আপনি যদি এই চাকরি ছাড়ার দরখাস্ত কঠিন মনে করেন। তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনি সম্পূর্ণ অনুসরণ করতে পারেন।

কারণ আমরা এখানে আপনাকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত কিভাবে লিখতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

পদত্যাগপত্র বা রিজাইন লেটার কি ?

পদত্যাগপত্র বা রিজাইন লেটার হচ্ছে, একটি লিখিত নোটিশ। একজন ব্যক্তি তার নিজের অফিস বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট পথ ছেড়ে দেওয়ার জন্য অব্যাহতি ঘোষণা করতে লিখে থাকেন।

একটি অব্যাহতি পত্র লেখার প্রাথমিক উদ্দেশ্য থাকে। নির্দিষ্ট ব্যক্তির একটি অফিশিয়াল রেকর্ড তৈরি করা। কিন্তু একে কর্মচারীর তরফ থেকে একটি সৌজন্য প্রকাশ এর মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়।

একটি রিজাইন লেটার এর সাহায্যে আপনি আপনার পুরনো অফিসে কাজ এর শেষ দিন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে পারবেন।

ফাইনাল ট্রানজিশন এ সহায়তা করতে পারেন এবং আপনার নিয়োগকর্তাদের তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে পারেন।

একটি রিজাইন লেটারে কি কি থাকা উচিত ?

আপনি যদি কোন চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে চান বা রিজাইন লেটার লিখতে চান। তাহলে সেখানে আপনাকে স্পষ্ট ভাবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধাপে ধাপে লিখতে হবে।

একটি রিজাইন লেটার এ কি কি থাকা উচিত সে বিষয়ে জানতে নীচে দেয়া তথ্যগুলো অনুসরণ করুন।

[wp_show_posts id=”3306″]

অভিবাদন জানানো

আপনার অব্যাহতি পত্র উপযুক্ত ব্যক্তি কে উদ্দেশ্য করে লিখতে হবে। সম্ভবত একটি পত্র আপনাকে সরাসরি আপনার h&r প্রতিনিধি বা ম্যানেজারের কাছে পাঠাতে হবে।

কিন্তু কখনও আপনি আবেদনপত্রটি আপনার বিভাগ বা সামগ্রিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাতে পারেন। আপনি বিজনেস লেটার এর ক্ষেত্রে সাধারণ সম্ভাষণ প্রিয় স্যার, ম্যাডাম/ মহোদয়, মহাত্মন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

আপনার উদ্দেশ্য

আপনার অব্যাহতি পত্রের মূল অংশের স্পষ্টভাবে আপনি কেন এই পথ এবং কোম্পানি ছেড়ে দিতে চান সে সম্পর্কে লিখতে হবে। সেখানে আপনার বর্তমান পদ এবং কোম্পানির নাম উল্লেখ করে দিতে হবে।

আপনি এই বিবৃতিতে আপনার শেষ আজকের তারিখ অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। তবে পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত লেখা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।

আপনার চাকরির শেষ তারিখ

আপনার অব্যহতি পত্রে আপনার কাজের শেষ দিন কবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে। কমপক্ষে দুই সপ্তাহের নোটিশ সব জায়গাতে বাঞ্ছনীয় থাকে।

কিন্তু আপনার পরিস্থিতি এর ওপর ভিত্তি করে আপনি যদি অবিলম্বে অব্যাহতি বা রিজাইন দেন। তাহলে তা দিতে পারেন এছাড়া আরো নোটিশ দিতে পারেন।

আপনি কোম্পানি ছেড়ে যাওয়ার আগে যে সকল তথ্য আপনাকে সম্পন্ন করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে যেমন- বাকি থাকা প্রজেক্ট এবং পেমেন্ট।

এটাই সঠিক রিজাইন লেটার আপনার প্রতিষ্ঠানকে আপনার আসন্ন অনুপস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করে। এবং আপনার স্থানে অন্য কাউকে খুজতে অফিশিয়াল ভাবে অনুমতি প্রদান করে।

আপনার কোম্পানি ছাড়ার কারণ

আপনার কোম্পানি ছাড়ার কারণ সেটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত হতে পারে, স্থানান্তরের জন্য হতে পারে, আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি বা অন্যান্য যেকোনো কারণে হোক না কেন আপনার স্পষ্টভাবে পদত্যাগের কারণ সম্বন্ধে লিখতে হবে।

আপনি কেন চাকরি ছাড়ছেন সেই বিষয়ে আপনার নিয়োগকর্তাকে স্পষ্ট কারণ জানিয়ে দিতে হবে। আপনার অব্যাহতি পত্রের ব্যক্তিগত বিবরণ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

আপনার অব্যাহতি ভঙ্গিটি নম্র ভদ্র এবং প্রফেশনাল ভাবে রাখুন।

ধন্যবাদ জানানো

একটি পত্র হচ্ছে আপনার নিয়োগকর্তার প্রতিভাবান সহকর্মীদের সাথে কাজ করার মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন এবং ইনকামের সুযোগের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন এর একটি মাধ্যম।

এর জন্য আপনার প্রকাশ করা আপনার নোটিশ পিরিয়ড চলাকালীন অনেক ভালো সময় নিয়ে আসতে পারে। এমনকি কোম্পানির প্রতি একটা ইতিবাচক ধারণা প্রকাশ, কোম্পানি ছাড়ার পরে, যেখান থেকে আপনার একটা ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করে।

নোটিশ পিরিয়ডে কোম্পানিকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি

উক্ত প্রত্যাহার পত্রের মধ্যে আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবর্তনকে সহজ করে, তোলতে আপনাকে সহায়তা প্রস্তাব দিতে পারেন।

মনে করুন- আপনারা বলতে পারেন যে আপনি কোন নতুন কর্মচারীকে আপনার পোস্টে যথাযোগ্য করে তুলতে কোম্পানির সহায়তা করতে ইচ্ছুক।

আপনার যোগাযোগের সঠিক তথ্য

আপনি উপযুক্ত প্রশংসামূলক লেখার মাধ্যমে আপনার রিজাইন লেটার লেখার শেষ করবেন। অব্যাহতি পত্রের হার্ডকপি জমা দিলে আপনার টাইপ করা নামের উপর স্বাক্ষর করবেন।

আপনার যদি ইতিমধ্যে আপনার দরখাস্ত মধ্যে ব্যক্তিগত বিবরণ যুক্ত না করে থাকেন। তাহলে আপনার স্বাক্ষরের পড়ে সেটির যোগ করে দেবেন।

এখানে কোম্পানিতে আপনার বর্তমান পোস্ট এবং পেশাদার যোগাযোগের বিবরণ সংযুক্ত করা উচিত। আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য দিতে পারেন।

যাতে আপনার ছেড়ে যাওয়ার পরেও কোম্পানি যদি আপনার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে এবং আপনার কাছে পৌঁছাতে পারে।

অব্যাহতি বা রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম

আপনি যদি রিজাইন লেটার লেখার নিয়ম জানতে চান ।তাহলে অবশ্যই রেজিগনেশন লেটার লেখার ফরমেট অনুসরণ করে চলতে হবে।

তাই এটি লেখার সময় বেশ কয়েকটি কড়া নিয়ম মেনে নিতে হবে। যেমন-

তারিখ-

যেদিন অফিস ছেড়ে দেবেন সেই তারিখটা অবশ্যই এখানে যুক্ত করতে হবে। কমপক্ষে এক মাস কোন কোম্পানিকে আপনার জায়গায় কোন কর্মের যুক্ত করার সময় দেওয়া উচিত।

শর্ট নোটিশে চাকরি ছাড়তে চাইলে, অবশ্যই কোম্পানির সাথে আলোচনা করে তারপর অব্যাহতি পত্র তারিখ লিখবেন।

ঠিকানা-

ফর্মাল লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের ঠিকানা এবং অন্যান্য যাবতীয় বিবরণ যোগ করে দিতে ভুলবেন না।

সম্বোধন

আপনার কর্তৃপক্ষ এর উদ্দেশ্যে যে সম্বোধন আপনি করবেন তা যেন স্পষ্ট হয়ে থাকে।

লেখার ভঙ্গি

আপনার লেখা রিজাইন লেটার এর ধারণাটি যেন ভদ্র এবং মার্জিত ভাষায় হয়। কোন প্রকার কটু কথা কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতি এবং পেশাগত জীবনে ক্ষতিকারক।

তার জন্য শব্দ নির্বাচন এবং লেখার ভঙ্গের প্রতি যত্নশীল হবেন। যতটা সম্ভব ছোট করে তবে গুছিয়ে আপনার বক্তব্য গুলো লেখার চেষ্টা করবেন। একই ধরণের লেখা বক্তব্য বারবার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।

এখানে যাতে আপনার কোম্পানি ছাড়ার কারণ গুলো স্পষ্ট ভাবে লেখা থাকে তা না হলে, এই দরখাস্তটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

শুরু এবং সমাপ্তি

একটি ভালো অব্যাহতি পত্র শুরু এবং শেষ দুই ভাগ আকর্ষণীয় করা প্রয়োজন। সব সময় জানবেন যেকোন অফিসিয়াল দরখাস্ত তে কোন ভূল-ত্রূটি থেকে যাওয়া কোনোভাবেই শোভা পায় না।

তার জন্য যতটা সম্ভব ভুল ভ্রান্তি স্পষ্টভাবে আপনার রিজাইন লেটার লেখার চেষ্টা করবেন।

বিভিন্ন চাকরি ছাড়ার দরখাস্ত লেখার নমুনা

আপনি যদি চাকরির রিজাইন লেটার লিখতে চান তাহলে উপরের তথ্যগুলো অনুসরণ করে ধাপে ধাপে আপনাকে অব্যাহতি পত্র লিখতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই গছিয়ে রিজাইন লেটার লিখতে পারেনা।

[wp_show_posts id=”3303″]

তাই আমি আপনাদের এখানে বিভিন্ন চাকরি ছাড়ার দরখাস্ত লেখার নমুনা সম্পর্কে জানিয়ে দেবো বাংলাতে। আপনি যদি চাকরি ছাড়ার দরখাস্ত লিখতে চান তাহলে নিচের দেওয়া তথ্যগুলো অনুসরণ করুন।

চাকরির রিজাইন লেটার বাংলা

তারিখ : ২১ জানুয়ারি ২০২৩

বরাবর,

কর্তৃপক্ষের নাম এবং

কর্মকর্তার পদবী

কোম্পানির নাম,

কোম্পানির ঠিকানা।

বিষয়: চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্যে আবেদন।

মহোদয়,

আমি, (মোঃ/মোছাঃ ওমুক) দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ আপনার কোম্পানি (কোম্পানির নাম), (আপনার শাখা), একজন কর্মচারী (আপনার পদবী) হিসেবে নিযুক্ত রয়েছি।

কিন্তু, বর্তমানে আমার উক্ত কোম্পানি থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার জোরে, অন্য একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে (এখানে আপনি আপনার নিজস্ব সমস্যা লিখবেন) এরিয়া ম্যানেজার পদে, সংযুক্ত হওয়ার অফার পেয়েছি। আমরা সকলেই, জীবনে উন্নতি করতে চাই। আর আমি এই সুযোগটিকে হারিয়ে ফেলতে চাই না।

তাই অত্যন্ত দুঃখ এর সহিত জানাচ্ছি যে, আমার পক্ষে এই কোম্পানিতে আর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। আপনার এই কোম্পানিতে ,কাজ করার সর্বশেষ তারিখ হচ্ছে- ২১/০১/২০২৩ ইং।

আপনার দেওয়া সাহচর্য এবং সহকর্মীদের অমূল্য সহায়তার জন্য, আমি এই কোম্পানি থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

আপনাদের এই কোম্পানিতে কাজ করে, আমি অনেক প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, যা আমাকে ভবিষ্যতে সমৃদ্ধ করবে বলে, আমি মনপ্রাণ দিয়ে আশা করি। এই কোম্পানির সকলের আন্তরিক ব্যবহার আমার চলার পথে পাথেয় হয়ে রইবে।

আমি আরো আশা করি যে, আমাদের এই কোম্পানি (কোম্পানির নাম লিখুন) ভবিষ্যতে, আরো অনেক উন্নতির দিকে এগিয়ে ধাবিত হবে।

আর আমার আশা রইল যে, এই কোম্পানি আমাকে তাদের একজন মূল্যবান কর্মচারী হিসেবে সারা জীবন মনে রাখবে। আপনাদের সকল এর অবদান আমি কোনো দিন ভুলে যাব না।

এই কোম্পানি চাইলে, আমার স্থানে নিযুক্ত হওয়া নতুন কর্মচারীকে ট্রেনিং দিতে পারি। যাতে কোম্পানির কোনোরূপ সমস্যা না দেখা দেয়।

অতএব, মহোদয় সমীপে আকুল আবেদন যে, আমার বিনীত অনুরোধ এই অব্যাহতি পত্র মঞ্জুর করে, আমাকে বাধিত করবেন।

নিবেদক

আপনার নাম এবং স্বাক্ষর

কোম্পানির ঠিকানা

আপনার নিজস্ব ঠিকানা

যোগাযোগের মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল এড্রেস।

[wp_show_posts id=”3308″]

শেষ কথাঃ

তো বন্ধুরা আজ আমাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হলো, চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য দরখাস্ত কিভাবে লিখতে হয়।

আপনি যদি কোন কোম্পানীর অফিসের চাকরি ছাড়তে চান। তাহলে উপরের দেওয়া নমুনা অনুসরণ করে সহজেই চাকরির রিজাইন লেটার লিখতে পারবে বাংলাতে।

বন্ধুরা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লাগলো আশা করি কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।

আর বিশেষ করে আপনার বন্ধুদের এই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দরখাস্ত লেখা নিয়তির জানাতে একটি সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার করে নিবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment