ট্রেডমার্ক কি ? ট্রেডমার্ক করার নিয়ম ২০২৩

ট্রেডমার্ক কি : কেন ট্রেডমার্ক প্রয়োজন কিংবা কিভাবে করতে হয়, ট্রেডমার্ক করার নিয়ম। আপনি যদি ট্রেডমার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে চান তাহলে সঠিক একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেছেন। আমরা আজ ট্রেডমার্ক কি এবং ট্রেডমার্ক করার নিয়ম সম্পর্কে জানিয়ে দেবো।

বর্তমান সময়ে আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের, প্রয়োজনে বাজার থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেট পণ্য কি না থাকে। আপনারা ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন প্যাকেটের গায়ে কোন নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের একটি স্বতন্ত্র লোগো চিহ্ন থাকে। এটি মূলত হচ্ছে ট্রেডমার্ক।

ট্রেডমার্ক কি ? ট্রেডমার্ক করার নিয়ম ২০২৩
ট্রেডমার্ক কি ? ট্রেডমার্ক করার নিয়ম ২০২৩

আপনার কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রডাক্ট থাকলে। অবশ্যই আপনার একটি ট্রেডমার্ক করা প্রয়োজন পড়বে। কারণ বাজারে অন্যান্য প্রোডাক্টের থেকে আপনার ব্যবসা বা প্রোডাক্ট আলাদা করার জন্য ট্রেডমার্ক অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

আপনার প্রডাক্ট ব্যবসার নাম দিয়ে কোন কিছু নকল করে অন্য কেউ বাজারজাত করলে। সেই সকল ব্যবসা বা ব্যবসার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

তাছাড়া ট্রেডমার্ক আইন কত সালে ট্রেডমার্ক এর সুবিধা কি? এ নিয়ে যত প্রশ্ন আছে সকল বিষয়ে আমরা আজ এই পোস্টে জানিয়ে দেবো।

ট্রেডমার্ক কি ? (what is trademark)

আপনি যদি নিজের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চান। আপনি অবশ্যই চাইবেন আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর থাকে যেন কিছুটা অনন্য এবং জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য সম্বলিত হয়।

কারণ আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য একেবারে স্বতন্ত্র একটি নাম নির্বাচন করলেন। ব্যবসায়িক নীতিমালায় পরিবর্তন এর পাশাপাশি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য প্রয়োজন। একদম নতুন একটি লোগো বা চিহ্ন যা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সব জায়গায় উপস্থাপন করবে।

অবশ্যই পড়ুনঃ

সেই লোগো বা চিহ্ন ব্যবসায়িক পরিচিতি বাড়িয়ে, তুলতে সহযোগিতা করবে। তাই বলা যেতে পারে ট্রেডমার্ক ব্যবসা স্বত্ত্ব হচ্ছে, এমন একটি চিহ্ন যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রডাক্ট, অন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্য আলাদা করা যায়।

সবার আগে ইতালিতে টেডমার্ক এর ব্যবহার শুরু হয়। সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্র চিহ্ন সে প্রতিষ্ঠান কাগজপত্র, কার্ড ,ক্যাশ, মেমো অন্যান্য সার্ভিস এবং প্রোডাক্ট এর মধ্যে দেখা যায়। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানের ট্রেডমার্ক নির্দিষ্ট সময় পরে নবায়ন করা যায়।

আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন ট্রেডমার্ক কি? যদি না বুঝে থাকেন। তাহলে দয়া করে, উপরের আলোচনাটি আরো একবার পড়ে নিন।

কেন ট্রেডমার্ক করা প্রয়োজন?

ট্রেডমার্ক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বা সেই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে একমাত্র সেটা ব্যবহার করতে পারবেন।

মনে করুন আপনি যেকোন নামে একটি ব্যবসা চালু করলেন। এবং সেই নামে একটি ব্র্যান্ড তৈরি হলো। সেই সময় ওই নামে অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলে আপনার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে বা আপনার পরিশ্রমের ফল সে ব্যক্তি ভোগ করতে শুরু করে দিল।

আরো পড়ুনঃ

তাই এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার উপায় হচ্ছে ট্রেডমার্ক। আপনি যদি আপনার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পণ্যের গায়ে ট্রেডমার্ক ব্যবহার করেন।

সে ক্ষেত্রে আপনার কোম্পানির নামে আরো অন্যান্য কোম্পানি থাকলেও কোন সমস্যা হবে না। কারন আপনার কোম্পানির পরিচয় দিবে ট্রেডমার্ক।

তাই আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য অবশ্যই ট্রেডমার্ক ব্যবহার করা উচিত।

ট্রেডমার্কের সুবিধা কি কি ?

টেড মার্ক ব্যবহার করা অনেক সুবিধা রয়েছে। ট্রেডমার্ক মূলত কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এক মূল্যবান সম্পদ হিসেবে পরিচিত।

ট্রেডমার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে স্বত্বাধিকারী’রা দীর্ঘ সময় ধরে তাদের পণ্য এর উপরে একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করে থাকে।

তাছাড়া ট্রেডমার্ক ব্যবহারের কারণে ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয়। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠান যেকোনো ধরনের প্রোডাক্ট বাজারে এনে খুব সহজে লাভবান হতে পারে।

অন্যদিকে ট্রেডমার্ক কিংবা ব্র্যান্ড ভ্যালু কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য কি রোগ হতে পারে সে সম্পর্কে কাস্টমাররা ধারণা নিতে পারে।

এছাড়া ক্রেতারা পণ্যটি সংগ্রহ করার পর নষ্ট বা ব্যবহার অযোগ্য হলে, আইনগত সুবিধা লাভ করতে পারে। ট্রেডমার্ক ব্যবহারের ফলে বিক্রেতারা কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে যেমন পণ্যের দাম নিয়ে  কাস্টমারদের সাথে সময় নষ্ট করতে হয়না।

অবশ্যই দেখুনঃ

ট্রেডমার্কের এবং ভেলুর কারণে বিক্রেতাগণ পরিবেশ এবং ডিলারগণ শোরুম এর মাধ্যমে সেই পণ্য বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।

টেডমার্ক ব্যবহার করা অনেক সুবিধাজনক তাই আপনারা সবাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেডমার্ক ব্যবহার করুন।

ট্রেডমার্ক নিবন্ধন বা রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম ২০২৩

ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করার জন্য পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর এর নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে। সে ফরমটি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মাধ্যমে অনলাইনে ডাউনলোড করতে পারবেন। আমরা আপনার সুবিধার জন্য নিবন্ধন করার জন্য সিটি ডাউনলোড করার একটি লিংক দিয়ে দিব।

ট্রেডমার্ক নিবন্ধন বারে স্টেশন করার ফরম ডাউনলোড করুনঃ www.dpdt.gov.bd.  নেক্সট আবেদন ফরম এর মাধ্যমে মালিকানা আছে। এমন কোন ব্যক্তি বা এই ব্যক্তি আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

উল্লেখিত ফর্ম টি ডাউনলোড করে যথাযথভাবে কম্পিউটারে 4 সেট সঠিকভাবে পূরণ করে নিতে হবে।

তারপর পূরণকৃত ফরম নির্দিষ্ট দলিলপত্রাদি সরকারের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর “৯১,মতিঝিল বা/এ, ঢাকা” নিচতলা অবস্থিত তথ্য ও সেবা কেন্দ্র দিতে হবে।

অবশ্যই পড়ুনঃ

উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রামের শাখা অফিসের ঠিকানাঃ 218, সরকারি কার্য ভবন-1, আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম। তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের সঠিকভাবে পূরণকৃত আবেদনপত্র এর আবেদনকারীর ক্রমিক নম্বর সহ একটি প্রাপ্তি স্বীকার পত্র জমা দিতে হবে।

এ সম্পর্কে আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেছি দেখুন-

বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সেবার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা আবেদন করতে হবে। এবং আবেদন ফরম এর নির্ধারিত জায়গায় প্রোডাক্ট/সেবা কোন শ্রেনীভুক্ত তা উল্লেখ করে দিতে হবে। কোন প্রকার পণ্য বা সেবা কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত তা আগেই জেনে নিতে হবে।

লেভেল বা মার্ক প্রমাণ সাইজের টেকসই কাগজ এর হতে হবে। আবেদনপত্রের নির্ধারিত জায়গায় আঠা লাগিয়ে দিতে হবে। মার্ক বা লেভেল হিসাবে কোন প্যাকেট/ ফটোকপি গ্রহণ যোগ্য হবে না। লেভেল এর মধ্যে কোন ধরনের ট্রেডমার্ক তা সঠিক ভাবে TM চিহ্ন করে দিতে হবে।

উপরোক্ত প্রমাণ ছাড়া লেভেলে ®, ISO, BSTI এছাড়া অন্যান্য কোন সংস্থার চিহ্ন রাখা যাবে না। মার্ক, লেভেল, লোগো তে বাংলা, ইংরেজি ব্যতীত অন্য কোন ভাষা ব্যবহৃত হলে আবেদনপত্রের 6 নং কলামে সেটি ট্রানসলেশন এবং ট্রান্সলিটারেশন করে দিতে হবে।

মার্ক, লোগো তে কোন মানুষ এর ছবি ব্যবহার করতে চাইলে, সংশ্লিষ্ট মানুষ এর অভিভাবক এর অনাপত্তিপত্র জমা দান করতে হবে।

আবেদন ফরম টি তিন নম্বর কলামে মার্কের, লোগোর বর্ণনা বিবরণ লিখতে হবে।

আবেদন ফরম এর নির্ধারিত স্থানে পণ্য বা সার্ভিস এর বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।

আবেদন প্রাপ্তির 7 নম্বর কলামে, “ক” অংশে ব্যক্তির নাম এবং তথ্যাবলী লিখতে হবে, “খ” কোম্পানির নাম এবং তথ্যাদি উল্লেখ করে দিতে হবে।

আবেদনকারীর যদি কোম্পানি হয়ে থাকে তাহলে কোম্পানি কোন দেশের আইনে গঠিত তা উল্লেখ করতে হবে।

আরো দেখুনঃ

আবেদন ফরম 7 নম্বর কলামে, “গ” কোম্পানির ব্যবসার ধরন উল্লেখ করতে হবে। যেমন প্রস্তুতকারক, আমদানিকারক এবং সেবাদানকারী ইত্যাদি।

আবেদন ফরমের সাত নম্বর কলামে “ক” বা “খ” আবেদনকারীর চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগের পূনাঙ্গ ঠিকানা উল্লেখ করে দিতে হবে।

আবেদন ফরমের 10 নম্বর কলামে, মার্কের নির্দিষ্ট তারিখ সহ ব্যবহার কাল উল্লেখ করে দিতে হবে। মার্ক টি ব্যবহার না হয়ে থাকলে সেই স্থানে, Proposed to be used লিখতে হবে।

আবেদন ফরম এর নির্ধারিত স্থানে, আবেদনকারীর নাম, স্বাক্ষর, ইমেইল এড্রেস, মোবাইল নাম্বার লিখতে হবে। আবেদনকারীর Priority Claim এর আবেদন করলে এর সমর্থনে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র যুক্ত করে দিতে হবে। এবং আবেদনের 11 নম্বর কলামে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

যদি স্বত্বাধিকারী আইনজীবী বা তালিকাভুক্ত এজেন্টের মাধ্যমে আবেদনপত্র দাখিল করেন তাহলে, মুল/ সত্যায়িত GPA/PA (টিএম-10) ফরমে যথাযথ (GPA- 1000 টাকা এবং PA- 500 টাকা) প্রদান করতে হবে।

আবেদন ফি রেজিস্টার ডিপিডিটির অনুকূলে, যেকোনো টপসেল ব্যাংক এর মাধ্যমে বা পে অর্ডার/ ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে দাখিল করতে হবে।

আবেদনপত্র জমা দেওয়ার আগে আবেদনকারী যদি চান, আকাঙ্খিত মার্ক টি ইতোমধ্যে কোন পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত কিনা তা নির্দিষ্ট ফি সহ 1000 টাকা টিম-4 ফরমে আবেদন এর মাধ্যমে দুই সপ্তাহ এর মধ্যে জেনে নিতে পারবেন।

বিদেশি আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই এজেন্ট বা আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে আবেদন করতে হবে।

ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন ফি

ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন ফি সাধারণত পণ্যের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে, কত টাকা লাগবে সেটি জানা যায়। আমরা আপনাকে সহজ ভাবে বুঝার জন্য একটি তালিকা তৈরি করেছি। সেটি দেখে আপনারা বুঝে নিতে পারবেন ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন ফি কত টাকা।

  • ১ টি পণ্য – ১৫০০ টাকা হতে ৫০০০ টাকা।
  • ২ থেকে ৪ টি পণ্য – ২৫০০ টাকা হতে ১০০০০ টাকা।
  • ৫ টি বা ততোধিক পণ্য – ৩৫০০ টাকা হতে ১৫০০০ টাকা।

আপনি যদি অক্টোর টাকা খরচ করে ট্রেডমার্ক করতে চান তাহলে আপনারা ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন এর মেয়াদ থেকে 7 বছরের জন্য। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই নবায়নের আবেদন করলে, 10 (দশ) বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে।

আরো পড়ুনঃ

শেষ কথাঃ

তো বন্ধুরা আজ আমাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হলো, ট্রেডমার্ক কি ? এবং ট্রেডমার্ক করার নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে। আপনি যদি কোম্পানির পণ্য গুলো ট্রেডমার্ক করতে চান।

তাহলে অবশ্যই আপনারা এই নিয়মে, আপনাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি ট্রেডমার্ক করে নিতে পারবেন। যার ফলে আপনার অনেক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। যেগুলো আপনার ওপরে আলোচনাতে জানিয়েছেন।

তো আমাদের আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লাগলো অবশ্যই একটি কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। আর নতুন নতুন আর্টিকেল পড়তে চাইলে, নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

Leave a Comment