বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার সহজ নিয়ম- বাংলাদেশের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের অন্যতম প্রধান মাধ্যম বিকাশ। দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে সহজেই অর্থ লেনদেন করার সুযোগের জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন যারা বিদেশে থেকেও বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করতে চান। এই আর্টিকেলে বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার পদ্ধতি সহজ ভাষায় এবং বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
এখন দেশসেরা বিকাশ অ্যাপ সীমানা পেরিয়ে বিদেশে! প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেই বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করে কোনো ঝামেলা ছাড়াই প্রিয়জনের কাছে টাকা পাঠাতে পারবেন মুহূর্তেই!
প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করে কোনো ঝামেলা ছাড়াই মুহূর্তেই প্রিয়জনের কাছে টাকা পাঠাতে পারবেন।
বিদেশি মোবাইল নম্বর দিয়ে বিকাশ রেজিষ্ট্রেশন
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করার জন্য একজন বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্রধারী গ্রাহক তার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বসবাসরত দেশের মোবাইল নাম্বার দিয়ে সহজেই একাউন্ট খুলতে পারবেন। বর্তমানে ৫২টি দেশের মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান থেকে নিজ বিকাশ একাউন্টে টাকা এনে দেশে থাকা প্রিয়জনের নাম্বারে সেন্ড মানি এবং মোবাইল রিচার্জ করতে পারবেন।
যদি আপনার বিকাশ একাউন্ট না থাকে, তবে বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন আপনার বিদেশি মোবাইল নাম্বার দিয়েই!
আরও পড়ুন: কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করবেন
যে সকল দেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলা যাবে?
বর্তমানে যেসব দেশে গ্রাহক বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন তা হলো:-
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালি, কাতার, ওমান, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, বাহরাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভারত, জাপান, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, মিশর, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, বতসোয়ানা, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, বেলজিয়াম, বেলিজ, ব্রাজিল, ব্রুনাই, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, চাদ, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, সুরিনাম, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, উগান্ডা, ভানুয়াতু, জিম্বাবুয়ে, ম্যাকাও, জাম্বিয়া
বিকাশ একাউন্ট খোলার প্রাথমিক শর্তাবলী
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য কিছু প্রাথমিক শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। এই শর্তাবলী নিম্নরূপঃ
- বয়স: কমপক্ষে ১৮ বছর।
- জাতীয় পরিচয়পত্র: বাংলাদেশের বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে।
- বাংলাদেশি মোবাইল নম্বর: বাংলাদেশের মোবাইল নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক।
বিকাশ একাউন্ট খোলার ধাপসমূহ
ধাপ ১: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমেই কিছু ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে। সেগুলো হলো:
- জাতীয় পরিচয়পত্র: ফ্রন্ট এবং ব্যাক উভয় দিকের স্ক্যান কপি।
- পাসপোর্টের ছবি: পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্যসম্বলিত পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি।
- মোবাইল নম্বর: বাংলাদেশের যেকোনো মোবাইল অপারেটরের সক্রিয় নম্বর।
ধাপ ২: বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করা
প্রথমেই আপনাকে আপনার স্মার্টফোনে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে।
- অ্যান্ড্রয়েড: গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
- আইওএস: অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
ধাপ ৩: বিকাশ অ্যাপে নিবন্ধন করা
বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করার পর নিম্নোক্ত ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে: Bkash App Download
- অ্যাপ খুলুন: বিকাশ অ্যাপ ওপেন করুন।
- নিবন্ধন: “নিবন্ধন করুন” বা “Sign Up” বাটনে ক্লিক করুন।
- নাম ও মোবাইল নম্বর: আপনার পুরো নাম এবং বাংলাদেশি মোবাইল নম্বর প্রবেশ করান।
- ওটিপি ভেরিফিকেশন: আপনার মোবাইল নম্বরে আসা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) দিয়ে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন।
ধাপ ৪: ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পর আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর প্রদান করুন।
- জন্মতারিখ: আপনার জন্মতারিখ প্রদান করুন।
- পাসপোর্টের তথ্য: পাসপোর্টের তথ্য প্রদান করুন।
ধাপ ৫: ছবি ও সেলফি আপলোড করা
পরবর্তী ধাপে আপনাকে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য কিছু ছবি আপলোড করতে হবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি: ফ্রন্ট এবং ব্যাক উভয় দিকের ছবি আপলোড করুন।
- সেলফি: আপনার সাম্প্রতিক সেলফি আপলোড করুন।
ধাপ ৬: বিকাশ পিন সেট করা
সকল তথ্য প্রদান ও যাচাইকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আপনাকে একটি ৫ ডিজিটের পিন সেট করতে হবে যা ভবিষ্যতে লেনদেনের জন্য ব্যবহার হবে।
বিকাশ একাউন্ট খোলার সুবিধাসমূহ
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার মাধ্যমে প্রবাসীরা নানা ধরনের সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। এই সুবিধাগুলি নিম্নরূপ:
সুবিধা | বর্ণনা |
---|---|
দ্রুত লেনদেন | অতি দ্রুত সময়ে টাকা লেনদেন করা যায়। |
সুবিধাজনক | মোবাইল ফোন ব্যবহার করে যে কোন সময় টাকা লেনদেন করা যায়। |
নিরাপত্তা | নিরাপদ পিন ব্যবহার করে লেনদেন নিশ্চিত করা যায়। |
ব্যাংক একাউন্ট সংযোগ | সহজে ব্যাংক একাউন্টের সাথে সংযোগ করা যায়। |
ইউটিলিটি বিল পরিশোধ | বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা যায়। |
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট ব্যবহারের সুবিধাসমূহ
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা লাভ করা যায়। যেমন:
- আর্থিক সহযোগিতা: বিদেশ থেকে প্রিয়জনদের অর্থ প্রেরণ করা যায়।
- বিল পরিশোধ: বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল, স্কুল ফি, ইন্টারনেট বিল পরিশোধ করা যায়।
- অনলাইন কেনাকাটা: বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট থেকে অনলাইন কেনাকাটা করা যায়।
সাধারণ সমস্যাসমূহ ও সমাধান
সমস্যাঃ ওটিপি না পাওয়া
সমাধানঃ
- সঠিক মোবাইল নম্বর প্রবেশ করানো হয়েছে কিনা যাচাই করুন।
- মোবাইল নেটওয়ার্ক সিগন্যাল ঠিক আছে কিনা চেক করুন।
সমস্যাঃ পাসপোর্ট তথ্য গ্রহণ হচ্ছে না
সমাধানঃ
- পাসপোর্টের ছবির গুণগত মান ভালো কিনা যাচাই করুন।
- পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়নি কিনা চেক করুন।
সমস্যাঃ জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা যাচ্ছে না
সমাধানঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করা হয়েছে কিনা যাচাই করুন।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি স্পষ্ট কিনা চেক করুন।
উপসংহার
বিদেশ থেকে বিকাশ একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সহজ এবং সুবিধাজনক। উপরোক্ত ধাপগুলি অনুসরণ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সহজেই তাদের বিকাশ একাউন্ট খুলতে এবং ব্যবহার করতে পারেন। এটি তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সহজতর এবং গতিশীল করে তোলে। তাই, বিকাশ ব্যবহার করে প্রবাসীরা তাদের প্রিয়জনদের সাথে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারেন এবং নিজেদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে আরও বেশি সুবিধা লাভ করতে পারেন।