মোবাইল কেনার আগে যে ১০ টি জিনিস অবশ্যই দেখবেন : বর্তমানে নতুন স্মার্ট মোবাইল ফোন কেনার সময় না ঠকে সঠিক পছন্দের মোবাইল ফোন কিনে আনা একটি বিশাল টাস্ক বলা চলে।
আপনি জানি বর্তমানে বাজারে একই দামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের একাধিক স্মার্ট মোবাইল ফোন আছে।
তাই আপনার মাথায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বর্তমান সময়ে স্মার্ট মোবাইল ফোন মানুষের এক ধরণের অঙ্গ হয়ে উঠছে। তাই মোবাইল কেনার আগে সচেতনতার দিকে অনেক বেশি নজর দিতে হবে।
আমরা আপনাকে দেখাবো এ যোগে একটি স্মার্ট মোবাইল কেনার আগে আপনার কি কি বিষয় জানতে হবে এ সম্পর্কে আমরা এখানে আলোচনা করবো।
আমরা জানি স্মার্ট ফোন কেনার জন্য তেমন কোন নিয়ম বা বিষয় নেই। আসলে আপনি যদি একটি দামি মোবাইল কেনেন তাহলে আপনাকে বেসিক, এডভান্স ফিউচার এর বেপারে জানা থাকলে আপনি নিঃসন্দেহে একটি ভালো কোয়ালিটি স্মার্ট ফোন কিনতে পারবেন।
আমরা এখানে আপনার সাথে আলোচনা করবো মোবাইল কেনার আগে ১০ টি জিনিস অবশ্যই দেখবেন। তাই নিচে দেওয়া ধাপ গুলো স্টেপ বাই স্টেপ দেখুন।
০১। মোবাইলের ডিসপ্লে
মোবাইল কেনার আগে যে বিষয়টি প্রথমে খেয়াল করতে হবে তা হলো মোবাইলের ডিসপ্লে। আমরা যারা মোবাইল কিনে থাকি তারা শুধু মাত্র মোবাইলের সাইজ বা ডিসপ্লে কত বড় সেটাই দেখে থাকি।
কিন্তু মোবাইলের স্ক্রিন সাইজ দেখোর থেকে আপনাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ডিসপ্লে শুধু HD নাকি ফোল HD নাকি wvga সেই বিষয়টি আপনার জানা জরুরি। বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যবহার কার জন্য মোবাইল সাইজ ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি’র ভেতরে থাকাই ভালো।
আপনার ফোন যদি HD বা ফোল HD হয় তাহলে মোবাইলের স্ক্রিনে আপনি ভিডিও, ভিডিও গেমস খেলার সময় অনেক পরিষ্কার চোখে দেখতে পারবেন।
আপনার ফোন যদি শুধূ HD হয় তাহলে ভিডি বা গেমস খেলার সময় এতটা আকর্ষনীয় হবে না। তাই আপনাকে ফোল HD দেখে একটি স্মার্ট ফোন কিনতে হবে।
০২। ব্যাটারি পাওয়ার
আপনি যখন একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন কিনবেন তখন আপনাকে অবশ্যই ব্যাটারির পাওয়ার দেখে নেওয়া জরুরী। আমরা জানি বর্তমানে যে কোন স্মার্ট মোবাইলের ব্যাটারী মোবাইলের সাথে সংযোক্ত করে দেওয়া। আগের সময়ের ফোন গুলোর ব্যাটারি গুলো মোবাইল থেকে খুলে চার্জ করতে হবে।
বর্তমানে সময়ে সকল স্মার্ট ফোনের সাথে ব্যাটারি এডজাস্ট করা থাকে। আপনি যদি মোবাইল কেনেন তবে আপনাকে প্রথমে দেখেতে হবে মোবাইলের ব্যাটারী কত MaH এর। আপনার ফোনের ব্যাটারী যত বেশি MaH এর হবে তত বেশি চার্জ থাকবে।
আমরা জানি বর্তমানে স্মার্ট ফোন থাকলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি মোবাইল ডাটা অতিরিক্ত ভাবে কাজ করে থাকেন তাহলে দেখতে পারবেন ১-২ ঘন্টা ব্যবহার না করে থাকেন তাহলেও আপনার স্মার্ট ফোনের ব্যাটারী নিজে নিজেই চার্জ কমতে থাকবে।
আপনি যদি স্মার্ট ফোন দিযে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং অনলাইন গেমস খেলেন তবে আপনার ফোনের জন্য MaH এর ব্যাটারি পাওয়ার হাই হতে হবে।
যখন কোন স্মার্ট ফোন কিনবেন তখন মোবাইলেরর ব্যাটারি ৪০০০ MaH বা ৪০০০ এর উপরে MaH দেখে কিনতে হবে। তা না হলে আপনার ফোন ১-২ ঘন্টা পর পর চার্জ দিতে হবে।
আপনি যদি ৪০০০+ mHa দেখে মোবাইল কিনেন তাহলে আপনি একবার ফোল চার্জ দিয়ে প্রায় ৮ খেকে ১০ ঘন্ট একটানা ব্যবহার করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ
- ১৫ টি প্রয়োজনীয় এবং কাজের ওয়েবসাইট [বিস্তারিত এখানে]
- পিডিএফ ফাইল এডিট কিভাবে করবেন ? সহজ নিয়ম (PDF Editor)
- Google Drive কি? কিভাবে গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করব [বিস্তারিত এখানে]
০৩। মোবাইল র্যাম
আপনি যখন কোন স্মার্ট মোবাইল কিনবেন তখন খেয়াল রাখতে হবে সেই ফোনের র্যাম কত দেওয়া রয়েছে। একটি স্মার্ট মোবাইল হ্যাং হওয়া থেকে রক্ষা করতে আপনার প্রয়োজন হবে মোবাইল র্যাম।
আমরা জনি মোবাইলের র্যাম সাধারণত কোন নরমাল স্মার্ট ফোনে ৫১২ MB হয়ে থাকে। কিন্তু ৫১২ MB দিয়ে মোবাইল র্যাম ব্যবহার করলে ১ মিনিট পর পর দেখবেন একটা কাজ করলে আরেটা অটোমেটিকলি হবে।
এর ফলে আপনি ভালো ভাবে কোন কাজ করতে পারবে না। তাই আপনি যদি একটি ভালো কোয়ালিটির মোবাইল র্যাম কিনতে চান তাহলে সর্বনিম্ন ৩ জিবি থেকে ৪ জিবি থাকা মোবাইল গুলো কিনবেন। আর আপনি যদি আরো কয়েটাকা খরচ করেন তবে ৬ জিবি থাকা মোবাইল কিনলে পানির মতো চলবে।
তাই ৫১২ MB, ১ জিবি এবং ২ জিবি র্যাম থাকা কোন মোবাইল কিনবেন না। কারণ নতুন কেনার সময় কয়েক দিন ভালো চলবে তার পরে আসতে আসতে সেটি হ্যাং হতে শুরু করবে। তাই উপরিউক্ত তথ্য অনুযায়ী আপনি একটি ভালো র্যাম থাকা মোবাইল কিনুন।
০৪। মোবাইল প্রসেসর
আমরা উক্ত আলোচনায় র্যাম এর বিষয়ে নিয়ে বলেছি। মোবাইল র্যাম এর মতো প্রসেসর ফোনকে স্মত ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
আপনার যদি মোবাইলের প্রসেসর dual Core বা quad core হয় তাহলে খুব সম্ভব আপনার মোবাইল কিছু দিন পরেই হ্যাং বা স্লো হওয়া শুরু করবে।
প্রসেসর কোর এবং স্পিড যদি কম থাকে তাহলে র্যাম বেশি থাকলেও মোবাইল হ্যাং হবেই। তাই স্মার্ট ফোন কেনার আগে আপনাকে দেখে নিতে হবে যে, প্রসেসর কোর এর সংখ্যা এবং প্রসেসর স্পিড।
আপনি যে স্মার্ট ফোন কিনবেন সেখানে যদি ১.৫ GHz থেকে ২ GHz থাকে তাহলে সেই মোবাইল কখনও হ্যাং বা স্লো হবে না ঘুড়ার মতো দ্রুত চলবে।
০৫। মোবাইলের ফাংশন
আমরা মনে করি ভালো একটি স্মার্ট মোবাইলের জন্য জন্য কিছু জরুরী এডভান্স ফাংশন থাকাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে অনেক কম দামের স্মার্ট মোবাইল ফোন রয়েছে সে গুলোতে অনেক ধরণের ফাংশন সেট করা হয়েছে।
আপনি যদি কম দাম দিয়ে ভালো একটি স্মার্ট ফোন কিনতে পারেন তবে আপনার অনেক টাকা বেচে যাবে।
বর্তমানে কম থেকে কম দামের স্মার্ট মোবাইল ফোন গুলোতে যে ধরণের ফাংশন দেওয়া রয়েছে তা হলো-
- ফেস লক [যার মাধ্যমে নিজের মুখ দিয়ে মোবাইল আনলক করা যায়],
- ফিঙ্গার প্রিন্ট লক [ যার মাধ্যমে নিজের যে কোন আঙ্গুল দিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট হিসেবে আনলক করা যায়],
- wifi & Hotspot [wifi ও Hotspot এর মাধ্যমে আমরা নিজের মোবাইল থেকে অন্য মোবাইল বা কম্পিউটারে ডাটা শেয়ার করতে পারি],
- USB, OTG [যার মাধ্যমে মোবাইল ফোন গুলোতে আপনার যে কোন প্রেন্ড্রাইভ, usb device কানেক্ট, কম্পিউটার কিবোর্ড, মাউস ইত্যাদি সংযুক্ত করা হয়]।
এ ছাড়া আরো অনেক ফাংশন রয়েছে যা দেখে আপনার একটি ভালো স্মার্ট ফোন কিনতে পারবেন। উক্ত ফাংশন তালিকা গুলো দেখে একটি স্মার্ট ফোন কিনলে আপনি ঠকবেন না।
০৬।মোবাইলের ক্যামেরা
আপনি যদি একটি মোবাইল কিনেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই দেখে নিতে হবে মোবাইলের ক্যামেরা কেমন।
আপনি যদি মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ভালো ছবি তোলেন বা নিজের মোবাইল থেকে হাই কোয়ালিটি এইচডি ছবি তোলতে চান? তাহলে মোবাইল কেনার আগে আপনাকে ক্যামেরা কোয়ালিটি দেখে নিতে হবে।
বর্তমানে হাই কোয়ালিটি ছবি তোলার জন্য ১৩ MP পিছন ক্যামেরা আর ৮ MP মোবাইলের সামনের ক্যামেরা থাকলেই চলবে।
আপনি যদি মোবাইলে শুধু ছবি তোলার জন্যই কিনেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ১৬ mp বা তার চেয়েও বেশি MP এর মোবাইল ফোন একটু বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে।
তবে সাধারণ ভাবে মোবাইল ব্যবহার করার জন্য বা ছবি তোলার জন্য ১৩ MP পিছন ক্যামেরা আর ৮ MP মোবাইলের সামনের ক্যামেরাই যথেষ্ট।
মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে যে, ক্যামেরাটি কোয়ালিটি সম্পন্ন কি না। আমরা জানি বর্তমানে Redmi mi, Samsung, Oppo, Vivo মোবাইল গুগলোতে ১৩ mp ক্যামেরা কোয়ালিটি অনেক উন্নত।
০৭। মোবাইলের ডিজাইন ও স্টাইল
স্মার্ট ফোনের ডিজাইন বা স্টাইল কেমন হবে সেটা আপনার উপার নির্ভর করে। কারণ আপনি যে ডিজাইন পছন্দ করেন সেটাই সেরা।
তারপরেও আমরা আপনাকে সাজেস্ট করছি অবশ্যই এমন একটি মোবাইল কিনতে হবে যার বডি স্লিম থাকবে ও মোবাইলের Back সাইট কালো বা সিলভার কালার থাকবে।
বর্তমানে অনেক ধরনের মোবাইল পাওয়া যায় সে গুলোর পেছনে হরেক রকম ব্যাক কালার দেওয়া থাকে।
মোবাইলের ডিজাইন ও স্টাইল আপনি যে রকম পছন্দ করেন সেই রকম কিনতে পারেন এতে কোন সমস্যা নেই।
০৮। মোবাইলের স্টোরেজ
আপনি যখন কোন স্মার্ট মোবাইল কিনবেন তখন স্টোরেজ এর কথা মাথায় রাখতে হবে। বর্তমানে অনেক ধরনের মোবাইল বিভিন্ন ধরণের স্টোরেজ স্পেস দেওয়া থাকে।
যেমন: ১৬ জিবি, ৩২ জিবি, ৬৪ জিবি, ১২৮ জিবি ইত্যাদির মোবাইল স্টোরেজ হয়ে থাকে।
আপনি যখন কোন স্মার্ট ফোন কিনবেন তখন সর্বনিম্ন ৩২ জিবি থেকে ৬৪ জিবির স্টোরেজ দেখে স্মার্ট ফোন কিনবেন।
এতে করে আপনার ফোনের অনেক তথ্য যেমন: কোন ফাইল, ডকুমেন্ট, ভিডিও, অডিও, গেমস ইত্যাদি রাখতে পারবেন ইচ্ছা মতো।
০৯। মোবাইলের ভার্সন
বর্তমানে মোবাইল ফোন কেনার সময় আপনাকে জেনে নিতে হবে ফোনের ভার্সন কত দেওয়া। যে সকল ফোনে ভার্সন বেশি থাকে সেই সকল ফোনে তত বেশি অ্যাপস ভালো কাজ করে।
আপনি যদি ভালো স্মার্ট ফোন কিনেন তবে আপনাকে সর্বনিম্ন ১০ ভার্সনের উপরের মোবাইল ফোন গুলো কিন্ত হবে।
শেষ কথাঃ
আশা করি উক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পারছেন। যে একটি মোবাইল কেনার জন্য আপনাকে কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
আমাদের এই পোস্ট যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমাদের এই পোস্টের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।