ভোটার আইডি কার্ড জন্ম সাল সংশোধন : ভোটার আইডি কার্ডে বিদ্যমান সকল তথ্যের মধ্যে, জন্ম তারিখ সংশোধন করা সব থেকে ঝামেলা পূরণ একটি কাজ।
জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য করনীয় কি? এবং কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে, ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ সংশোধন করা যায়। সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তাই আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড জন্মসাল সংশোধন করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি সে বিষয়ে জানতে চান? তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন এর আবেদন
জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন করলেই যে, সেটি সংশোধন হয়ে যাবে সেটা কিন্তু নয়।
আপনার যদি ভোটার আইডি কার্ডে বিদ্যমান জন্মতারিখ প্রকৃতপক্ষে ভুল হয়ে থাকে। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করলে সেটি সংশোধন হবে।
তবে, যদি কেউ স্বার্থপরের জন্য বা সুবিধা পাওয়ার আশায় জাতীয় পরিচয় পত্র/ ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন সে ক্ষেত্রে সে আবেদন অনুমোদন নাও হতে পারে।
এর কারণ অনেকেই রয়েছে, সরকারি ভাতা পাওয়া বা সরকারি চাকরি পাওয়া। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য।
ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে বয়স কমানো বা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট ছাড়া, শুধু অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র, কোন স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণীর পাশের তৈরি করে। আবেদনের সাথে দাখিল করে দেয়। এবং পাঁচ থেকে দশ বছর বয়স পরিবর্তন করতে চাই।
এ সকল আবেদন গুলোর সচরাচর অনুমোদন পাওয়া যায় না। তার কারণ সে ব্যক্তির দাখিলকৃত কাগজপত্র তার জাতীয় পরিচয় / ভোটার আইডি কার্ডের চাহিত জন্ম তারিখের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ বহন করে না।
এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা অষ্টম শ্রেণী পাস বা তেমন কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ নাই এবং তাদের চাকরির বয়সও চলে গেছে। কোন না কোন ভাবে জন্ম নিবন্ধন জমা দিয়ে ছোটখাটো একটি চাকরি করছে।
পরবর্তী সময়ে জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া বেতন ভাতা উঠাতে পারছে না। আবার জাতীয় পরিচয়পত্র উল্লেখিত জন্ম তারিখ এর সাথে চাকরির বইয়ের জন্য তারিখে ৫ থেকে ১০ বছর গরমিল আছে।
সে ক্ষেত্রে লোকেরা বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন করেন।
ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদনের সাথে তার দাখিলকৃত কাগজপত্র ৫ থেকে ১০ বছর বয়স কমানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়।
বিধায় মাসের পর মাস আবেদন অফিসে পড়ে থাকে। নির্বাচন অফিসে ঘুরতে ঘুরতে হয়তো জুতা ক্ষয় হওয়া অবস্থা।
কিন্তু তারপরও তার জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ সংশোধন হয় না। সেজন্য লোকেরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারেনা।
তো এরকম ভাবে কিছুদিন থাকার পরে হয়তো মানুষ অন্যদের কাছে বলে বেড়ায়। উপজেলা নির্বাচন অফিসে শুধু ভোগান্তি ছাড়া আর কিছু নয়। বিভিন্নভাবে নির্বাচন অফিসের দুর্নাম করে বেড়ায়।
তবে কেউ কি এখনো ভেবে দেখেছেন যে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এমন আবেদন গুলো অনুমোদন দেবেন কিসের উপর ভিত্তি করে।
আবেদনকারীর দাখিলকে তো কাগজপত্র সরে যাবেন তদন্ত প্রতিবেদন এগুলোর কোন কিছুই আবেদনকারীর পক্ষে নাই।
এ ধরনের আবেদন অনুমোদন দিয়ে কেন সেই উপজেলা নির্বাচন অফিসার নিজে বিপদে পড়বেন বা সমালোচনায় পড়বেন।
এছাড়া যার চাকরির বয়স নেই বয়স কমিয়ে দিয়ে চাকরির সুযোগ করে দিলে, একজন যোগ্য ব্যক্তির চাকরির সুযোগ সারা জীবনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
তো কোন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র/ ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ সংশোধন এর বৃথা চেষ্টা করে, সময় নষ্ট না করাই ভালো।
প্রকৃতপক্ষে যদি জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম সাল ভুল থাকে এবং আপনার কাছে সঠিক প্রমাণ পত্র থাকে যেমন- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, এসএসসি সার্টিফিকেট।
তবে তার সাথে অন্যান্য আরো কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আবেদন করলে অল্প সময়ের মধ্যে ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ সংশোধন করতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ ও সাল সংশোধন এর আবেদন প্রক্রিয়া
আপনি যদি জাতীয় পরিচয় পত্র/ ভোটার আইডি কার্ড জন্মসাল সংশোধনের আবেদন দাখিল করতে চান তাহলে দুইভাবে আবেদন করতে পারবেন।
১। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ২ নং সংশোধনী ফরম পূরণ করে নির্ধারিত সরকারি ফি জমাদানের রশিদ।
এবং অন্যান্য প্রয়োজনে কাগজপত্র আবেদনের সাথে সংযুক্ত করে, অফিসে জমা দিলে। ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ ও সাল সংশোধন করতে পারবেন।
২। অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট services.nidw.gov.bd এখানে প্রবেশ করে, প্রথমে একটি অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
উপরোক্ত ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলে অবশ্যই লগইন করতে হবে।
লগইন করার পর প্রোফাইল অপশনে গেলে, জন্ম তারিখ সহ আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা। সকল তথ্যাদি দেখানো হবে। এবং সে তথ্যগুলো এডিট করতে পারবেন।
যেহেতু আপনি ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ এডিট করবেন সেক্ষেত্রে এডিট বাটনে ক্লিক করে সঠিক জন্ম তারিখটি লিখে দেবেন।
এবং পরবর্তী ধাপে যাবেন। তারপর সেখানে পেমেন্ট সম্পর্কিত তথ্য দেখানো হবে।
পেমেন্ট পরিশোধ করে পরবর্তী ধাপে গেলে, ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে।
এরকম ভাবে প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করার পর আবেদনটি সাবমিট করবেন। আবেদন সাবমিট করা হয়ে গেলে। আবেদনের একটি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করার অপশন দেয়া হবে।
সেটি আপনারা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করে রাখবেন। পরবর্তীতে কখনো নির্বাচন অফিসে গিয়ে, খোঁজখবর নিতে চাইলে, আবেদনের সেই কপিটির সাথে রাখতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড জন্ম সাল সংশোধন এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
তো আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড জন্মসাল সংশোধন করতে চান? তাহলে উপরোক্ত উপজেলা নির্বাচন অফিস বা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
আর আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় যে সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে।
সেগুলো হচ্ছে-
- এসএসসি সার্টিফিকেট।
- ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- কাবিননামা সনদ।
- স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় কপি।
- সকল ভাই-বোন এর জাতীয় পরিচয় পত্র কপি।
- পিতার উত্তরাধিকার সনদ।
- সার্ভিস বই এর কপি।
- পাসপোর্টের কপি।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স।
- অবসর ভাতা বইয়ের কপি।
- এফিডেভিট কপি।
তো বন্ধুরা আপনারা যারা ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ বা জন্ম সাল পরিবর্তন করতে চান? তারা উপরোক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে সহজেই ভোটার আইডি কার্ড জন্ম সাল পরিবর্তন করতে পারবেন।
শেষ কথাঃ
তো বন্ধুরা, আমাদের আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সাথে শেয়ার করা হলো ভোটার আইডি কার্ড জন্ম সাল সংশোধন করতে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে।
তো আপনারা যারা ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করতে চান? তারা উপরোক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে আজও উপজেলা নির্বাচন অফিসে বা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জানাতে পারেন।
আমাদের লেখা আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আর বিশেষ করে, আমাদের এই ওয়েবসাইট থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংক্রান্ত আরো নতুন নতুন তথ্য জানতে নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।