ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি : ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহার করে। এক ধরনের কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করা যায়।
এই ধরনের ভার্চুয়াল জগতে যাওয়ার জন্য। এক প্রকার ভার্চুয়াল ডিভাইস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্যবহার করা ভার্চুয়াল ডিভাইসে এক ধরনের কাল্পনিক দৃশ্য পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়া হয়।
যে ব্যক্তি এই ডিভাইস টি ব্যবহার করে, সে নিজের দেখা দৃশ্য পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ সত্য বলে মনে করেন। আপনারা বুঝতে পারবেন না যে, সেটি আসলে কাল্পনিক।
তবে যখন সেই কাল্পনিক দৃশ্য দেখবেন সেটি পরিপূর্ণভাবে আসল মনে হবে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর মাধ্যমে আপনাকে একটি 3D, 5D ওয়াল্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে সবকিছু কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়।
আপনি কি কখনো MARS গ্রহে গিয়েছিলেন। সমুদ্রের ভেতরে গিয়ে সাঁতার কেটে দেখেছেন, কিংবা ডাইনোসরের মধ্যে থেকে দেখেছেন। মনে হয় আপনি কখনো করে দেখেননি।
আমি যদি আপনাকে বলি যে এসব আপনারা করে দেখতে পারেন তাহলে কি বলেন। হ্যাঁ এটা অবশ্যই সম্ভব করা।
আপনারা MARS গ্রহে যাওয়ার সময় একেবারে শেষ অংশের সাঁতার কাটা এবং ডাইনোসরদের সাথে জঙ্গলে থাকা। সকল প্রকার পরিবেশে গিয়ে দেখতে পারবেন। এবং সম্পূর্ন সেভাবেই, যেভাবে সত্যি সত্যি গেলে অনুভব করা যায়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে আমরা যে, কোন কাল্পনিক পরিবেশ এবং জগৎ তৈরি করতে পারি সেই পরিবেশ এবং জগতে থাকার অনুভব নিতে পারি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এমন এক ধরনের আর্টিফিশিয়াল এন্টারটেইনমেন্ট। যাকে কিছুই বিশেষ, কম্পিউটার সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার এর ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হয়।
চলুন জেনে নেয়া যাক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি ?
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দুটি শব্দের মিলনে গঠিত। ভার্চুয়াল এবং রিয়েলিটি। এখন ভার্চুয়াল শব্দের অর্থ হচ্ছে, সামনে এবং রিয়েলিটি শব্দের অর্থ হচ্ছে বাস্তবতা।
কিন্তু এক্ষেত্রে বাস্তবতা শুধুমাত্র মানুষের দ্বারা অনুভব করা যেতে পারে। তার জন্য সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দের অর্থ হচ্ছে সামনের বাস্তবতা শুধুমাত্র অনুভব করা যায়।
একে এক ধরনের নির্দিষ্ট একটি বাস্তবিক একটি অনুকরণ বলা যায়। এটি 3D ও 5D প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কম্পিউটার এর মাধ্যমে তৈরি করা এমন একটি বিশ্ব যাকে আপনি ফিজিক্যালি এবং ম্যানুয়ালি দুই মাধ্যমে অনুভব করতে পারবেন।
তবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কাকে বলে এ বিষয়ে আপনারা হয়তো ধারণা পেয়ে গেছেন। তো চলুন এখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কিছু ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিহাস
আমরা যখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর কথা বলি তখন আমরা একটি আধুনিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিভাইস এবং কিছু কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন এর বিষয়ে চিন্তা করে থাকি। যেগুলোর মাধ্যমে আমরা একটি কাল্পনিক জগতে যেতে পারি।
কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ইতিহাসের কথা বললে, অনেক কিছুই বলার আছে। 1838 সালে প্রথম stereoscope আবিষ্কার করা হয়। যেখানে একটি প্রজেক্ট করার জন্য একটি twin mirror এর ব্যবহার করা হয়েছিল।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছিল 1980 এর মধ্য ভাগে। যখন ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম লেপ রিসার্চ এর ব্যবস্থাপক Jaron Lanier গুগল এবং Gloves সহ Gears বিকশিত শুরু করেছিলেন।
তারপর এটিকে তিনি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হিসেবে বলে থাকেন। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়েছিল 1957 সালে।
তার multimedia device যাকে বলা হয় Sensorama কে সবচেয়ে পূর্বকালীন VR system বলা হয়। কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দটি অনেক পরের সময়ে অন 1987 সালের মধ্যে নিয়ে আসা হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রকার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মূলত ৫ প্রকার বর্তমান সময়ে ব্যবহার করা হয়। আমাদের আশেপাশে পরিস্থিতিকে কাল্পনিক জগতে রূপান্তর করার জন্য।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ৫ টি সম্পর্কে আমরা এখানে জানিয়ে দেবো। যেমন-
- Fully- immersive
- Semi- immersive
- Non- immersive
- Augmented Reality
- Collaborative VR
আপনারা ওপরে যে পাঁচটি প্রকার দেখতে পাচ্ছেন এগুলো সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে তার জন্য নিচের তথ্যগুলো অনুসরণ করুন।
Fully-immersive
ভার্চুয়াল জগতে সম্পূর্ণ বাস্তব অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য এই fully-immersive ভার্চুয়াল টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এজন্য আপনার মনে হতে পারে যে আপনি সম্পূর্ণরূপে একটি অন্য জগতে বা পরিবেশে আছেন। আপনি সম্পূর্ণ শারীরিকভাবে অনুভব করার সাথে সাথে শারীরিক ভাবে সেই ভার্চুয়াল জগতে উপস্থিত আছেন বলে মনে হবে।
এছাড়া সে ভার্চুয়াল ওয়ার্ড এ আপনার সাথে ঘটে থাকবে সবকিছুই সম্পূর্ণ বাস্তব বলে মনে হবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর এই প্রকার অনেক এক্সপেন্সিভ এবং এর অনুভব নেওয়ার জন্যে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়।
fully-immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে কাল্পনিক জগৎ-এর অনুভব নেওয়ার জন্য টেকনিক্যাল হেলমেট গ্লাভস এবং কিছু বডি কানেক্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনার ইন্দ্রিয় গুলো শনাক্ত করার জন্য।
এই বডি কানেক্টর গুলো একটি শক্তিশালী কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে আপনার শারীরিক ভাবে করা সকল মুভমেন্ট বা হেলা-ডোলা এবং আপনার চোখ এর সাধারন পিটপিট করাও শনাক্ত করে। যেগুলো ভার্চুয়াল জগতে প্রজেক্ট বা স্থাপন করা হয়। তার জন্য আপনি সম্পূর্ণভাবে সে ভার্চুয়াল জগতে আছেন বলেই মনে করতে হবে।
Semi-immersive
Semi-immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এমন এক প্রকার যা non-immersive ও fully immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মিশ্রণ বলা যেতে পারে।
এটি এমন এক ধরনের ভার্চুয়াল জগত হতে পারে, যেখানে আপনি একটি কম্পিউটার স্ক্রিন ব্যবহার করছেন। এজন্য আপনার যে কোন প্রকার শারীরিক গতিবিধি অনুভব ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না।
এখানে আপনি শুধুমাত্র ভার্চুয়াল এক্সপেরিয়েন্স এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগৎ এর মজা গ্রহণ করতে পারবেন।
একটি কম্পিউটারে থাকা মাউসের ব্যবহার করার ফলে, আপনি পদক্ষেপ গুলো সম্পন্ন করতে পারবেন। এছাড়া আপনি যদি মোবাইল ব্যবহার করেন তাহলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মজা নিতে চাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে touch এবং swipe এর মাধ্যমে মুভ করতে পারবেন।
Non-immersive
Non-immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এমন কিছু ভার্চুয়াল এক্সপেরিয়েন্স গুলোকে বলা যায়। যেগুলো আপনি সফট্ওয়ারে মধ্যে থাকা কিছু ক্যারেক্টার এবং এক্টিভিটিস গুলোকে কন্ট্রোল করতে পারবেন।
তবে এ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ক্ষেত্রে আপনি সম্পূর্ণভাবে সে ভার্চুয়াল জগৎ এর পরিবেশের সাথে পরস্পর সংযুক্ত থাকতে পারবেন না।
মনে করুন আপনি একটি হাই গ্রাফিক্স এবং কম্পিউটার গেম খেলছেন। এই সময় আপনি যেকোনো একটি গেমের কথা ভাবতে পারেন সেটা হতে পারে Tomb rider.
এখন গেমের মধ্যে কিন্তু আপনি একটি ভার্চুয়াল জগতে রয়েছে এটা সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক।
কিন্তু এর মধ্যে আপনি গেমিং ক্যারেক্টারগুলোকে নিজের হিসেবে কন্ট্রোল করতে পারবেন। যেগুলো নিজের একটি আলাদা এনিমেশন এবং গঠন আছে।
এজন্য প্রযুক্তিগতভাবে আপনি একটি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড এর সাথে যুক্ত যদিও সরাসরিভাবে, সেখানে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু আপনি নন।
প্রতিটি কার্য পরিবেশ এবং বিশিষ্ট ডিমের ভেতরে থাকা ক্যারেক্টার গুলোর সাথে ইন্টারাক্ট করছে। কিন্তু আপনার সাথে না।
তাই বলতে গেলে সকল গেমিং বিভাগ যেমন- Xbox কম্পিউটার গুলো আমাদের, non-immersive ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অনুভব করার সুযোগ দিয়ে থাকে।
Augmented Reality
মনে করুন আপনি আপনার মোবাইলে নিজের ঘরের মধ্যে অন্যান্য রং গুলো দেখতে পারছেন এবং তার সাথে একটি কার্টুন ক্যারেক্টার নিজের ঘরের রুমে রেখে দিয়েছেন।
এখন আপনি আপনার মোবাইলের স্ক্রিনে থাকা ঘরের রুমে, এসেই কার্টুন ক্যারেক্টার দেখতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা থাকবে না।
তবে augmented reality হচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এমন একটি প্রকার যেখানে একটি অংশ ক্যারেক্টার জিনিস ভাগ বাস্তবে থাকা মনে হবে সেটা আসলে সত্যিকারে থাকবে না।
এই augmented reality এর প্রযুক্তি বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা নিজের ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন।
Collaborative VR
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক উন্নত এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা ভার্চুয়াল জগতে বিভিন্ন জায়গা থেকে, মানুষ যুক্ত হয়ে একটি ভার্চুয়াল পরিবেশে আসতে পারেন। এমনিতে, 3D এবং প্রজেক্ট ভার্চুয়াল ক্যারেক্টার হিসেবে আমরা ভার্চুয়াল পরিবেশ যুক্ত হতে পারি।
মনে করুন বর্তমান সময়ে সবথেকে জনপ্রিয় মোবাইল গেম হচ্ছে পাবজি। এই গেমটি তে অনলাইন প্লেয়ার একসাথে ইন্ডিভিজুয়াল ভার্চুয়াল ক্যারেক্টার হিসেবে একটি ভার্চুয়াল পরিবেশের সাথে রয়েছে।
আপনি নিজের ভার্চুয়াল ক্যারেক্টার কে নিজের হিসেবে কন্ট্রোল করতে পারবেন। এ ভার্চুয়াল জগতে একই সাথে অনেক জন মানুষ সক্রিয় থাকা। তারা মাইক্রোফোন, চ্যাটিং এর মাধ্যমে কথা বলা এবং কথা শোনা সবকিছুই করতে পারে। এই ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মধ্যে মানুষের মধ্যে সহযোগিতা করা।
আমরা আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সম্পর্কে। যদি না বুঝে থাকেন তাহলে দয়া করে উপরে আলোচনাটি আরও একবার পড়ে নিন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কিছু সুবিধা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অসংখ্য সুবিধা রয়েছে এরমধ্যে আমরা কিছু অসুবিধা সম্পর্কে আপনাকে সংক্ষিপ্তভাবে জানাবো যেমন-
- শিক্ষা এবং ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক সুবিধা যোগ্য।
- একটি কাল্পনিক জগতে এসে পরিবেশের অনুভব নেওয়া সম্ভব হয়।
- ট্রেনিং করার সময় আপনি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবেন।
- আধুনিক গেমিং এর ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক লাভজনক হিসেবে প্রমাণিত।
- বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করার জন্য ভার্চুয়াল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া আরো অনেক সুবিধা রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ৫টি ব্যবহার [বিস্তারিত এখানে]
- রোবট কি ? রোবট এবং মানুষের মধ্যে পার্থক্য
- iPhone 15 তে থাকতে পারে যে সকল কাঙ্ক্ষিত সুবিধা
শেষ কথাঃ
আজ আমাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেওয়ার রিয়েলিটি কি? কিভাবে কাজ করে এবং কত প্রকার ইত্যাদি সম্পর্কে। আপনি যদি সম্পর্কে, জানতে চান তাহলে আমাদের পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন।
আমরা আশা করি আপনারা আমাদের পোস্ট পড়ে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ টিপস জানতে পেরেছেন। আমাদের পোস্ট আপনার কাছে কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
বিশেষ করে আপনি যদি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন টিপস এন্ড ট্রিক্স পেতে চান, নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।